খুশি থাকার ৪ রহস্য !

“খুশি” শব্দটা খুব ছোট হলেও প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে প্রতিটা মানুষ নিজের জান্তে-অজান্তে ছুটছে একে পাবার জন্যে। আসলে কি করলে খুশির দেখা মিলবে তার কোন বাঁধাধরা নিয়ম নেই। একজন অভুক্ত মানুষের কাছে তিন বেলা পেট পুরে খেতে পারাটাই হয়তো সবচেয়ে বড় খুশি। কিন্তু সেই একই খাবার একজন বিত্তবান মানুষকে দিলে সে খুশি নাও হতে পারে।

অর্থাৎ নির্দিষ্ট কিছু নেই যা করলে সবাই খুশি হবে। আপনার কাছে যেটা খুশির কারণ সেটা আমার কাছে খুশির কারণ নাও হতে পারে, আবার আমার কাছে যেটা খুশির কারণ সেটা আপনার কাছে খুশির কারণ নাও হতে পারে।

খুশি হওয়ার জন্যে আপনাকে এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছাতে হবে এমন কোন নিয়ম নেই। সাধারণ কিছু জিনিস মেনে চলতে পারলে আপনি নিজেকে অন্যতম সুখী ব্যক্তি হিসেবে আবিষ্কার করতে পারবেন।

তো চলুন জেনে নেই খুশি থাকার রহস্য –

->আপনি যা পারেন না তা নিয়ে আফসোস করবেন না – আফসোস করাটা আমাদের অখুশি থাকার অন্যতম একটি কারণ। আপনি যা পারেন না তাতে মনোনিবেশ না করে আপনি যা পারেন তাতে মনোনিবেশ করুন। আপনি স্কুলে দৌড়ে প্রথম হতে পারেন নি, কিন্তু আপনি হয়তো খুব ভালো কম্পিউটার ঠিক করতে জানেন ! আপনার কাছে একটি ভালো মোবাইল নেই, কিন্তু আপনার হয়তো এমন কিছু বন্ধু আছে যারা সবসময়ে আপনার পাশে থাকে। এখন যে ছেলেটা স্কুলে দৌড়ে প্রথম হল সে হয়তো কম্পিউটারের অ-আ-ক-খ কিছুই বুঝেনা। আবার যে ছেলেটা ভালো মোবাইল চালায় তার হয়তো এমন কোন বন্ধুই নেই যে সবসময় তার পাশে থাকে। তাহলে দেখুন এদিক দিয়ে আপনি এগিয়ে !

অনেকের মধ্যে “আমি পারিনা, আমাকে দিয়ে কিচ্ছু সম্ভব না” এই টাইপ ধারণা থাকে। যা নিজেকে অখুশি রাখার জন্যে অনেক ভালো একটা মশলা। পিপীলিকার লেখক আসাদুজ্জামান নূরের কথাই ধরা যাক। সে প্রায়ই বলে আমি কিছু পারিনা, আমাকে দিয়ে কিছু হবেনা টাইপ কথা। অথচ সে খুব ভালো ক্রিকেট খেলতে পারে, টেকি মানুষ, হাতের লেখা মাশাআল্লাহ অসাধারণ, চাইলেই আশেপাশের মানুষকে হাসাতে হাসাতে পেটে খিল লাগাতে পারে, এক ঘুষি দিয়ে এক সপ্তাহের জন্যে কারো হাত অবশ করে দিতে পারে (আমার দিছিলো >_< ), পড়াশোনায় ভালো। অথচ এতো কিছুর পরে সে দাবী করে কিছু না পারার !

এমন মন-মানসিকতা যাদের তাদের উচিত নিজে যা পারে সেটার দিকে মনোনিবেশ করা। সেটার উপর সময় দিয়ে এমন কিছু করা যাতে নিজেকে খুশি ভাবার মতো যথেষ্ট কারণ খুঁজতে কুয়া খুঁড়তে না হয়।

নেগেটিভ জিনিস নিয়ে আফসোস করলে মন খারাপ থাকবে, আর নিজেকে কখনো সুখী ভাবতে পারবেন না। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আপনি যা পারেন তা নিয়েই যদি সন্তুষ্ট থাকেন তাহলে নিজেকে সুখী ভাবতে পারবেন। আজকে থেকে প্রতিজ্ঞা করুণ আপনার যা নেই বা আপনি যা পারেন না তা নিয়ে আর কোন আফসোস করবেন না।

->খেলাধুলা করুন – খেলাধুলা এমন জিনিস যা যেকোনো বয়সের মানুষকেই খুশি করতে সক্ষম। সারাদিনের কাজের ফাঁকে অল্প কিছু সময় খেলাধুলার জন্যে ব্যয় করুন। এতে শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকবে। আপনার যদি বয়স বেশি হয়ে থাকে তাতেও ভাবার কিছু নেই। সমবয়সী বেশ কয়েকজনকে খুঁজে বের করে নিয়ে নিয়ম করে খেলা শুরু করে দিন।

->বন্ধুবান্ধবদের সাথে যথেষ্ট সময় ব্যয় করুন – আড্ডা বিষয়টা একসময় অনেক প্রচলিত ছিল। কিন্তু বর্তমান আধুনিকতার বেড়াজালে ছেলেমেয়েদের মধ্যে আড্ডা দেয়ার মন-মানসিকতার অভাব দেখা দিয়েছে। কম্পিউটার-মোবাইল তো আড্ডা বিলুপ্ত করার পিছে অনেক বড় ভূমিকা রাখছে। আজকাল মানুষ সরাসরি বাহিরে কোথাও বসে আড্ডা দেয়ার চেয়ে ফেসবুকে, হোয়াটসঅ্যাপ এই আড্ডা দেয়। তবে ব্যতিক্রম যে নেই ঠিক তা না।

সবসময় চেষ্টা করবেন নিজের সবচেয়ে কাছের বন্ধুদের সাথে সময় কাটানোর। এতে মন-মেজাজ ভালো থাকবে আর নিজেকে আলাদা করে খুশি থাকার কারণ খুঁজতে হবেনা।

->ক্ষমা করতে শিখুন – আপনার পছন্দের ঘড়িটা কেউ ভেঙ্গে ফেলেছে, আপনার শখের সাইকেলে কেউ স্ক্র্যাচ ফেলে দিয়েছে, যদি এমন হয় তাহলে স্বাভাবিকভাবেই মন চাইবে তার প্রতি রাগ দেখানোর জন্যে। ধরুন আপনি রাগ দেখালেন, ফলাফল কি হবে? দুজনের মধ্যে মনোমালিন্য। আপনিও তার প্রতি রেগে থাকলেন এবং সেও আপনার প্রতি রেগে থাকলো।

কিন্তু যদি না রেগে তাকে ক্ষমা করে দিতেন? তাহলে? তাহলে মনোমালিন্য হতো না। সেও নিজের মনে মনে নিজেকে দোষী ভাবতো আর আপনার প্রতি তার মনটা আরও নরম হতো।

ক্ষমা করার কথা যা বললাম, সেটা কখনোই আমি পারতাম না। কেউ কিছু করলে সাথে সাথেই রাগ ঝাড়তাম। কিন্তু এখন বুঝতে পারি যে রাগ না দেখিয়ে চুপ থাকলে বা কিছু না বললেই আসলে শান্তি। তাই ক্ষমা করতেই এখন ভালো লাগে। 🙂

আপনি কি মনে করেন উপরের কারণগুলো খুশি থাকার জন্যে যথেষ্ট? আর কি উপায় যোগ করা যেতে পারে? 

 

Article Source: http://pplika.com/খুশি/